মহাগ্রন্থ আল কুরআন কারো প্রার্থীত গ্রন্থ নয়। এটি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বান্দার দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে সফল ও অর্থপূর্ণ করার উদ্দেশ্য নাযিলকৃত। এ গ্রন্থটির মাধ্যমে মানুষ তাঁর মহান রবকে নিজ নিজ সামর্থের আলোকে জানবে, আত্মপরিচয় লাভ করবে এবং মাটির মানুষ হয়ে মাটির পৃথিবীতে চলতে শিখবে। এরই ধারাবাহিকতায় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদাঙ্ক অনুসরণে দুনিয়াতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে জীবনযাপনের মাধ্যমে জান্নাতগামী মানুষ হবে। সে জন্য কুরআনের ভাষা বুঝতে হবে, কুরআনময় জীবন যাপন করতে হবে।
কুরআন মহাজ্ঞানী আল্লাহ তা‘আলার বাণী হলেও তা মানুষের উপযোগী সহজবোধ্য ভাষায় নাজিল করা হয়েছে। মহান রব তাঁর একান্ত দয়ায় এর ভাষা ও ভাবকে কালোত্তীর্ণ এবং সকলের বোধগম্য করেছেন। এটি কুরআনের অন্যতম একটি মো‘জেযাও বটে। তিনি বলেছেন- ‘আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি জিকিরের জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?’ (আল-ক্বামার, ৫৪:১৭) কেবল অনারব হওয়ার কারণে তা আমাদের বুঝার জন্য কিছুটা শ্রমসাধ্য হতে পারে কিন্তু একেবারে অসম্ভব হতে পারে না। কারণ একটি শ্বাশত জীবনবিধান বুঝা বা অনুধাবন করা-ই যদি অতিকঠিন হয়, তা সকলের জন্য অনুসরণীয় হয় কীভাবে? বিবেক এটিকে মোটেই সহজভাবে গ্রহণ করে না। শুধু কি তাই? এর বাহক, যার জীবনে কুরআন দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হয়েছে- সে জীবনটি কত সহজ, কত অনাড়ম্বর ও স্পষ্ট এবং প্রাণময় ছিল তার ইতিহাস কে না জানে? সেজন্যই কুরআনের বাহকের জীবন সকলের জন্য অনুসরণযোগ্য।
এটি কি সঠিক নয় যে, মানুষকে মনোদৈহিক সত্ত্বা হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে? দেহের খাবার জমিন, ক্ষেত-খামার, নদী-নালা-সমুদ্রে মিলে কিন্তু হৃদয়ের খাবার আসবে কোথা থেকে? এটি হৃদয়ের মালিক ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না। মানুষের বিশ্বাস, চিন্তা ও কাজকে সুন্দর করতে হলেও আসমানী নির্দেশনার বিকল্প নেই। আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক তৈরির জন্যও কুরআনের ভাষা জানা জরুরি। আমরা জানি যে, একটি সাধারণ গ্রন্থের অনুবাদেও মূলের গ্রন্থের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। সেখানে কুরআনের কথা বলার অপেক্ষা-ই রাখে না। তাই, কুরআনকে নিজ নিজ সামর্থের মধ্যে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে কুরআনের ভাষায়।
আলহামদুলিল্লাহ! আমরা অনেকেই কুরআনের নিয়মিত পাঠক। দিনের পর দিন পড়ছি, এ মহান গ্রন্থকে না বুঝে পাঠের মধ্য দিয়ে অনেকে মাস-বছর-যুগ পার করেছি। সন্দেহ নেই, এ কাজে সাওয়াব আছে। তবে প্রভূত কল্যাণ বঞ্চনার কী হবে? পবিত্র এ গ্রন্থটি মানুষের কাছে বিশ্বাসের যেমন দাবী রাখে, ঠিক তেমনিভাবে তা ভালোভাবে জানা-বুঝা ও পরিপালনের দাবিও রাখে। জীবন ও সমাজকে কীভাবে সাজাবেন, যদি কুরআনকে না-ই বুঝেন? আল্লাহর রঙে রঙ্গিন হবেন কি করে? তাই কুরআনকে হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে হবে। বুঝতে হবে কুরআনের ভাষায়। সে প্রত্যাশার পাঁপড়ি মেলে ধরতেই সীমিত সামর্থের মাঝে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আর হৃদয়ের গভীরে থাকা সুপ্ত বাসনা থেকেই ‘একাডেমি অব কুরআন’ নামে কুরআনের একটি মারকাজ প্রতিষ্ঠার ভাবনা। হয়তো বলবেন, অনেকে তো এ বিষয়ে কাজ করছেন। আবার নতুন উদ্যোগ কেন? হ্যাঁ, অনেক কাজ হয়েছে সত্য। কিন্তু সেটা ব্যক্তি পর্যায়ে; প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কুরআন বোঝার কাজটি সহজিকরণে কোন উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি।
আসুন না! চেষ্টা করে দেখি কুরআন বুঝে পড়ার কাজটিকে আরো সহজতর করা যায় কিনা? কুরআন শুধু বিশ্বাস আর তেলাওয়াতের গ্রন্থই নয়; তা জানা, বুঝা ও মানার দাবীও রাখে। বিষয়টি তুলে ধরতে আমরা যারা কুরআনকে ভালোবাসি, কুরআনের শাফায়াত প্রত্যাশা করি, তাদের সমন্বিত উদ্যোগে তা বুঝে পড়ার কাজকে সহজ করার চেষ্টা করি। সে অনুযায়ী দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের খেদমতকে কবুল করেন।